আকাশলীনা

 

মাঝ-আষাঢ় এলেই আমার ঘরের ভিতর
জেগে উঠত আর একটা ঘর,
সে স্বপ্ন।
প্রথম বর্ষায় ফুটত বেল, জুঁই, কামিনী,
শ্বেতটগর আর বিলের জলে শালুক,
বাদল দিনে মেঘলা আকাশে মন-মাঝি নৌকা নিয়ে
উজানে ভেসে যেত জলের দিকে চেয়ে।

জোলো বাতাসে স্কুল ফেরৎ নীলপাড় সাদা শাড়ির আঁচল
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উড়ে যেত দূর দিগন্তে।
ও-আঁচল একসময় আপনিই ফিরে আসত কাছে
কোমরে গুঁজতে গিয়ে দেখা –
সে মাথায় বৃষ্টি আড়াল করেছে ওই আঁচল টেনে
ষোল বছরের লজ্জা চোখে, নীচু মুখে
আস্তে আস্তে টানা আঁচল ঝর্ণার মতো
নেমে আসত চোখ, নাক, ঠোঁট বেয়ে। জলে পা দিয়ে
একছুটে পেরিয়ে যেতাম ইস্কুলের ডাঙা।
সে জোলো হাওয়ার সাথে ছুটে আসত পিছন পিছন
আর বলত – “আকাশ একা যাস না,
মাঠের জলে ঢোঁড়া সাপ আছে, আমার হাত ধর,
নইলে পড়ে যাবি পা পিছলে।”
কাদা-ঘাস ঢাকা আলপথে ধানগাছের
গা ছুঁয়ে, সদ্য যৌবনে পা দেওয়ার অনুভূতি নিয়ে
দু’হাত এক হয়ে জল ছিটিয়ে হাঁটা।
তারপর ও একদিন হারিয়ে গেল ভরা স্রোতে,
ধরা গেল না।
কত বছর হলো খুঁজে চলেছি তাকে…

আজ তার সন্ধান পেয়েছি।
সে অনেক অনেক জলের তলায় আমার দিকে চেয়ে আছে।
দ্বীপের মতো ভাসন্ত তার গায়ে
আমার ছায়া দোল খাচ্ছে মেঘভাসি সুরে।
আকাশের ছবি চোখে নিয়ে
শেষ আষাঢ়ে এই ঘন বর্ষায়
আমার সাথে ভাসছে নদীর জলে
নৌকার পাটাতনের নীচে।