শুক্তি দত্ত

 

পূর্বকথাঃ ইন্দিরার গল্প তো সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমবাবু অনেক দিন আগেই বলে গেছেন। তদানীন্তন প্রথানুযায়ী হরমোহন দত্তের প্রথমা কন্যা ইন্দিরার শৈশবেই বিবাহ হয়েছিল বটে, কিন্তু অর্থগৌরবে তাঁর সমকক্ষ না হওয়াতে তিনি আদরের আত্মজাকে শ্বশুরঘরে পাঠাননি, বরং জামাই উপেন্দ্রবাবুকে উপযুক্ত উপার্জনে প্রতিষ্ঠিত হবার পর ইন্দিরাকে নিয়ে যাবার উপদেশ দিয়েছিলেন। ব্যাপারটা ইন্দিরার শ্বশুরের কাছে অত্যন্ত অপমানকর মনে হলেও ধনী বেয়াইএর বিরুদ্ধাচরণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলনা; অগত্যা তিনি চুপ করে এই অপমান হজম করেন। উপেন্দ্রবাবু অধিকতর উপার্জনের আশায় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে যান এবং যথেষ্ট অর্থোপার্জনপূর্বক বাড়ি ফিরলে ইন্দিরার উনিশ বছর বয়েসে সে প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাত্রা করে। কিন্তু পথে কালাদিঘী নামে এক পুকুরের কাছে ভয়ঙ্কর ডাকাতিতে ইন্দিরার সর্বস্ব লুঠ হয়ে যায়, এবং জনবিরল জায়গায় তাকে ফেলে ডাকাতরা চলে যায়। ইন্দিরার কোনো বাড়িতেই আর ফেরা হয়না। কালক্রমে ইন্দিরাকে দেখা যায় কলকাতার রামরাম দত্তের বাড়িতে কর্মরতা দাসী হিসেবে। এখানে সে একমাত্র পুত্রবধূ অশেষগুণশালিনী সুভাষিনীকে পায় সত্যিকারের শুভাকাঙ্খিনী সখীরূপে, এবং তারই প্রচেষ্টায় অনেক ঘনঘটার পর ইন্দিরা বাপের বাড়ি ফিরে যায় ও পরিশেষে স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতেও সুপ্রতিষ্ঠিতা হয়। বঙ্কিমবাবু তো ইন্দিরা-উপেন্দ্রর সম্মিলিত সুখী দাম্পত্য জীবনের ইঙ্গিত দিয়ে উপন্যাসটি শেষ করেছেন; কিন্তু অবিমিশ্র সুখ বিধাতা কোন মানুষের ভাগ্যেই লেখেন কি? এই উত্তর-কথায় আসুন দেখি ইন্দিরা কেমন আছে।

ইন্দিরা চুপচাপ বসেছিলো আরামকেদারাতে। পশ্চিমের এই বারান্দাটা তার খুব প্রিয়। শ্বশুরের আমলের এই আরামকেদারাটা বোধহয় তার সব মানসিক বিচলনের একমাত্র আশ্রয়স্থল। আজ অনেকদিন পর উ-বাবু কলকাতা গেছেন বিশেষ এক মামলার কাজে। একরাত থাকতে হবে সেখানে। আজ রাতে এই বিশাল বাড়িটাতে ইন্দিরা একা। কালাদিঘীর ঘটনাটা যদিও আজ প্রায়বিস্মৃত এক অতীত, ইন্দিরার মনে এর জন্য আর কোনো কালো ছায়া নেই, কিন্তু এই কষ্টটা তার মনে কখনো সখনো ভেসে আসে যে এই ঘটনায় তার সুখকল্পিত প্রথম প্রিয়মিলন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।

ইন্দিরা কলকাতা থেকে ফিরে আসার পর আর কোনো গণ্ডগোল ঘটেনি তার জীবনে। সময় তার থেকে যা নিয়েছিল তার চতুর্গুণ দিয়ে তার জীবন ভরিয়ে দিয়েছিল। শ্বশুরের স্নেহ, স্বামীর ভালোবাসায় তার সুখের ভরা উপচে উঠেছিলো। বাড়ির দাসদাসীরা তার ব্যবহারে খুবই তুষ্ট ছিল আর তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতো। তবে একটা বেশ বড় কষ্টতো তার ছিলোই। তার সন্তান হয়নি। এই অভাবটা একজন মহিলার পক্ষে নিশ্চয়ই খুবই বড়, কিন্তু যে স্বামীকে পাবার কোনো আশা ছিলনা, তাকে এরকম অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে তার মনে অন্য কোনো চিন্তাই স্থান পায়নি। স্বামী-শ্বশুরের আদরেই সে পূর্ণ ছিল।

বিকেলের ছায়া প্রলম্বিত হয়ে সন্ধ্যার আঁধারকে দীর্ঘায়িত করছে, দাসী এসে খবর দিল, “মা, একটা বুড়ো মানুষ তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে।” ইন্দিরার মগ্নতা ভেঙ্গে গেল। অলস গলায় বলল, “বাবু বাড়ি নেই, এমন সময় কে এল আমার সাথে দেখা করতে? বলে দে, কাল বাবু ফিরলে আসতে।” দাসী বলল, “বলেছিনু মা, কিন্তু বুড়োটা নাছোড়বান্দা। বলে কিনা, মার সঙ্গে দেখা করাটা আজই দরকার।” ইন্দিরা একটু বিরক্ত হলেও শেষে বলল, “বৈঠকখানা ঘরে আলো দে আর লোকটিকে সেখানেই আসতে বল।”

অতবড় ঘরটা একটা মাত্র বাতিতে কি উজ্জ্বল হয়? ইন্দিরার বসার জায়গা ছাড়া বাকি ঘরে একটু ভৌতিকভাবে ছায়াটা নাচতে লাগল। তার মধ্যে বয়স্ক অথচ ঋজু চেহারার লোকটি উবু হয়ে অপেক্ষা করছিল। ইচ্ছে করেই একটু দেরী করে ইন্দিরা ঘরে ঢুকল। লোকটি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে তাকে নমস্কার জানাল। ইন্দিরা বলল, “কি ব্যাপার, বাবু বাড়ি নেই। তোমার দরকারটা বাবুকে বললেই তো ভাল করতে।”

“না মাজননী, দরকারটা আমার আপনার সাথেই। আমি বাবু বাড়ি নেই জেনেই এসেছি। দীর্ঘকাল একটা অপরাধের বোঝা মনের মধ্যে বাসা বেঁধে রয়েছে। বলতে পারিনি কাউকে। বাপের পাপে একমাত্র মেয়েটার জীবন ছারখার হয়ে গেল। শেষে আজ তোমার কাছে কবুল করতে এলাম। মাগো, তুমি ক্ষমা না করলে আমার শান্তি নেই।”

ইন্দিরা একটু অবাক হল। তার কাছে কিসের অপরাধ? সেতো লোকটাকে চেনেই না। ঈষৎ বিব্রত স্বরে বলল, “আমি তো বুঝতেই পারছিনা কোন অপরাধের কথা তুমি বলছ?”

লোকটা একটু চুপ থেকে বলল, “কালাদিঘীর কথা।”
ইন্দিরা চমকে উঠল। ঘরে বাজ পড়লেও সে এতো ধাক্কা খেতো না। অস্ফুটে বলল, “কালাদিঘী? হঠাৎ আজ আবার কালাদিঘী?”
“মা, তুমি সেদিন প্রথম স্বামীর কাছে যাচ্ছিলে। কত স্বপ্ন ছিল তোমার মনে। আমি তোমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছিলাম সেদিন।”
“আজ এতদিন পর সেকথা বলে কি লাভ?” অস্ফুটে বলল ইন্দিরা।
“আমি জানি, মা। ঈশ্বরের কৃপায় তোমার সব দুঃখ মুছে গেছে। কিন্তু আমার পাপ তো যায়নি। আজ সেই পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি। তোমার মত সতীলক্ষ্মী আমায় নিজমুখে ক্ষমা না করলে আমার সন্তানের জীবন শেষ হয়ে যাবে।”
“আমার তোমার উপর কোনো রাগ বা কষ্ট নেই বাছা। তুমি ভালো থেকো। এখন এস।”

লোকটি উঠল না। ধীরে ধীরে বলল, “মা একটা কথা তোমায় নিবেদন করতে চাই, আমি পাপ করেছি। তার শাস্তিও পেয়েছি। কিন্তু একাজ আমি নিজের ইচ্ছেয় করিনি। যিনি একাজ করতে আমায় হুকুম করেছিলেন…”
“হুকুম?” ইন্দিরা সোজা হয়ে বসল। লোক দিয়ে তার ক্ষতি করার চিন্তা কার মাথায় এল? কেনই বা এল? সে তো কারোর কোনো ক্ষতি করেনি। অতো ছোটো বয়সে অন্তঃপুরবাসিনী একটি মেয়ে, যার সঙ্গী ছিল শুধু মা, বাবা, ছোট বোন ও কয়েকজন দাসী, কারো শত্রু হয়ে গেল কেন ?
লোকটির গলা ভেসে এলো, “তিনি আর কেউ নন মা, তোমার শ্বশুর।”
“কিন্তু কেন,” আর্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল ইন্দিরা, “আমি তো ওঁর কোনো ক্ষতি করিনি!”
“ক্ষতি তুমি কেন করবে মা,” লোকটি বলে চলে, “তোমার শ্বশুরের শত্রুতা তোমার বাপের সঙ্গে। অবশ্য এই শত্রুতার কথা তোমার বাপও জানতেন না।”
“তাহলে?”
“তোমার মনে আছে তো, বিয়ের পর তোমার বাবা তোমায় শ্বশুরঘরে পাঠাননি তোমার স্বামীর রোজগার ভালো ছিলনা বলে। কর্তামশাই তোমায় আনতে যে লোক পাঠিয়েছিলেন তাকে তিনি হাসতে হাসতে ভালভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তোমায় উপযুক্তরূপে প্রতিপালন করার ক্ষমতা হলে তবেই তিনি তোমাকে স্বামীর ঘরে পাঠাবেন। কর্তামশাই এতে খুবই অপমানিত হয়েছিলেন আর সেই রাগ তিনি ভোলেননি। তিনি আবার ছেলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু খোকাবাবু তাতে একেবারেই বেঁকে বসেন। বেশি চাপাচাপির ফলে তিনি রাগ করে পড়াশোনার নাম করে পশ্চিমে চলে যান। শুনেছি সেখানে গিয়ে তিনি খুব উন্নতি করেছিলেন। এরপরই কর্তামশাই আবার বেয়াইবাড়ি লোক পাঠান তোমাকে আনার জন্য। কিন্তু আসলে তাঁর মনে অন্য কথা খেলা করছিল।”
“এতো কথা তুমি জানলে কি করে?”
“একথা কর্তাবাবু আমায় নিজমুখে জানালেন যে। আর কালাদিঘীতে ডাকাতির পরিকল্পনাটাও সেখনেই স্থির করা হল।”

এসব শুনতে শুনতে ইন্দিরা ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। কিন্তু সে অভিজাত ও জমিদার পরিবারের মেয়ে এবং বর্তমানে একটি পরিবারের সর্বময়ী কর্ত্রীও বটে। নিজেকে সংযত করার অভ্যাস তার সহজাত। খানিক সামলে সে বলল, “এসব কি বাজে কথা বলছো। এতোদিন পর, যে মানুষটি স্বর্গে গেছেন, তাঁর নামে এই দুর্নাম করতে তোমার বাধছে না?”
অপরাধী গলায় লোকটি বলল, “মাগো, কর্তাবাবু শরীরে থাকতে এসব বলার তো কোনো প্রশ্নই নেই। তাছাড়া তখন আমার মধ্যবয়স। মনে কোনো পাপবোধ ছিলনা। মালিকের হুকুম তামিল করেছি, এই তো আমার কাজ। কিন্তু আজ বৃদ্ধ বয়সে মনে হয় সব দায় মালিকের উপর দিয়ে বোধহয় সারা যায় না। আমার মেয়েটির সংসার যখন হঠাৎ করে ছারখার হয়ে গেল, সেদিন আমার নতুন করে তোমার সাজানো মুখখানা মনে পড়ল। হাত জোড় করে তোমার সেই করুণ কান্না আমার পিঠে চাবুক মারছিল। আমরা তো তোমার এয়োতির চিহ্ন শাঁখা লোহাটুকুও ছাড়িনি সোনার জন্য। এতোদিন তো তোমায় একলা পাইনি, আজ খোকাবাবু বাড়ি নেই বলে তোমার কাছে বোঝা নামিয়ে মাপ চাইতে এসেছি।”

বাইরে তখন ধূসর অন্ধকার। ঘরের থমথমে আবহাওয়াকে ভেঙ্গে দিয়ে ইন্দিরা উঠে দাঁড়াল। একটা কথাও না বলে বাইরে গিয়ে একজন দাসীকে হুকুম করল লোকটিকে কিছু খেতে দিতে। অন্য একজনের হাতে একটা খামে কিছু টাকা ভরে লোকটির হাতে তার মেয়ের নাম করে দেবার জন্য পাঠিয়ে দিল। সে আর বাইরে এল না। তার মনের ভিতর কষ্টের ঝড় বইছিল। শ্বশুরকে সে খুবই ভালোবাসতো। কিন্তু তিনি যে এমন ভেবেছিলেন কে জানতো।

একটা ফোনের শব্দে তার চটকা ভেঙ্গে গেল। কোলকাতা থেকে উ-বাবুর ফোন, তিনি কাজ শেষ না হওয়াতে কালকের বদলে পরশু ফিরবেন। ইন্দিরা ঠিক বুঝতে পারল না সে এই খবরে খুশি না দুঃখিত – কোনটা হবে। তবে এই মানসিক অবস্থায় স্বামীর মুখোমুখি হতে হোলো না বলে নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি বোধ করল। এক গ্লাস জল খেয়ে সে একটু সুস্থিত হয়ে ফোনে যোগাযোগ করল তার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার দিনগুলির একমাত্র সাথীকে। একমাত্র তাকেই সব খুলে বলা যায়। “ওখান থেকে আমার বাড়ি মাত্র দু’ঘন্টার পথ। তুমি শীগগির এসো। এই অন্ধকারে তুমি ছাড়া আর কোনো আলো নেই,” ফোনের মধ্য দিয়ে ইন্দিরার আর্তি আছড়ে পড়ল।

সুভাষিণী খুব অবাক হল। ইন্দিরার এবম্বিধ বিচলন! ইন্দিরাকে সে খুব শক্ত মনের মেয়ে বলে জানত। সে স্থির থাকতে পারল না। তার ছেলে এখন হস্টেলে থাকে। তাই তার তেমন চাপ নেই। আর র-বাবুর সহযোগিতার কথা তো বঙ্কিমবাবুই লিখে গেছেন। সে একটা চিরকুট লিখে রেখে দৌড়াল। কিন্তু পথ যে আর ফুরায় না। ইন্দিরার বাড়ী পৌঁছে হাঁপাতে হাঁপাতে দোতলায় উঠে সে ‘বেয়ান, বেয়ান’ বলে চিৎকার জুড়ে দিলো। সবাই জানে, সে খুব হাসিখুশি ধরনের মেয়ে। ইন্দিরার মুখোমুখি হয়ে সে খুব অবাক হয়ে গেল। একি চেহারা হয়েছে তার সখীর! চোখ ফুলে লাল; মুখ কালিবর্ণ। হাত ধরে সুভাষিণীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে ইন্দিরা দরজা বন্ধ করল, তারপর সখীর কোলের উপর অঝোরে ভেঙ্গে পড়ল।

সুভাষিণী কিছুই জিজ্ঞাসা করল না। শুধু হাত বুলিয়ে মাথায় দিতে লাগল। ইন্দিরাকে সময় দিল কান্নার মধ্য দিয়ে তার আবেগ ফুরিয়ে ফেলার। একসময় ইন্দিরা উঠে বসল। তারপর ভাঙ্গা গলায় বলল, “অনেকক্ষণ এসেছো দিদি, কিছু খেতে দিতে বলি।” সুভাষিণী হাত তুলে বারণ করে বলল, “আগে বল, কি হয়েছে, কেন ডেকেছিস।” ইন্দিরা আবার একটু ফোঁপালো, একটু সময় চুপ করে রইল, তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু খুলে বলল। সুভাষিণী শুনতে শুনতে বুঝতে পারল গণ্ডগোলটা কোথায় হয়েছে। ইন্দিরা সরলা। তিল তিল করে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় যে মন্দির সে মনের মধ্যে গড়ে তুলেছিল, সেখানে সে তার প্রিয়জনদের নিজের মনের মাধুরী মিশিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছিল। ভাগ্যের বিড়ম্বনায় অন্য সকলের মত করে তার জীবন শুরু হয়নি, এই ঘাটতি সে প্রাণপণে পূর্ণ করার চেষ্টা করত। সে দেখেছিল তার শ্বশুর তাকে কত ভালোবাসতেন। সে তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। আজ সেই দেবতার বিচ্যুতি, তার বিরুদ্ধে সেই শ্বশুরের ষড়যন্ত্রমূলক ভাবনা, কাজ তার সেই বিশ্বাসকে চূর্ণ করে দিয়েছে। এই আঘাত তার সহ্য হয়নি।

সুভাষিনী একটু হেসে ইন্দিরাকে টেনে তুলল। যত্ন করে মুখ মুছিয়ে দিল। তারপর বলল, “তুই কি বোকা রে, শুনলি না, উ-বাবু আবার বিয়ে করতে চাননি বলেই পশ্চিমে চলে গিয়েছিলেন। আরে সেই তো তোর আসল জোর। দেখ, তার ভালোবাসার কত জোর যে তুই আবার ফিরে এলি তার জীবনে!” আদর করে ইন্দিরার মুখটা নেড়ে দিল সে। সত্যিই তো, একথাটা তো তার মাথায় আসেনি, তৃতীয়ার শশীর মত ক্ষীণ হাসি ভেসে উঠল ইন্দিরার মুখে। ধীরে ধীরে পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে পড়ল সারা মুখে। সে সুভাষিণীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ধন্যি দিদি, আবার মনে পড়ল তুমি র-বাবুর প্রধানমন্ত্রী। তোমায় পেন্নাম।” দুহাতে চুলের গোছাকে খোঁপায় বেঁধে উঠে দাঁড়াল সে, “যাই, তোমার জন্য কিছু রাঁধিগে। সেই কখন এসেছো, আর আমায় দেখো? নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, ছি!”

দুই সখী হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে ঢলতে ঢলতে রান্নাঘরের দিকে চলল।