কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করবার ব্যার্থ চেষ্টা নিয়েও দেখি কোথাও যেন জেগে উঠছে নতুন চর। চরের দখলদারিত্ব নেবার সৎ সাহস নেই বলেই এড়িয়ে যাচ্ছি এই শোকবার্তা। আমরা মানবিক নই। এখনও ভয় পাই সামনে এগিয়ে যেতে। একজন ঋষি অনেক আগেই বলেছিলেন, ‘পেছনে তাকিয়ো না। যারা তাকায় তারা পাথর হয়ে যায়।‘ হয়তো তাই নিজের পাথুরে অবস্থান নিয়ে গর্বিত হয়েও কাঠাগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকি ঠাঁয়। সদা হাস্যময় আছি বলে কেউ জানেনা আসলে আমি কতটা স্থবির!


বিকেল বেলায় লনের দোলনাটা নড়ে উঠলো। বসে আছি রোদ্দুরহীন এক জনপদে। এখানে পাহাড় নেই, পাহারা আছে। পাহাড় ঠেললেও সরে না, পাহারাও ঠেলে সরাতে পারছি না। সামনের আমগাছের ডালটাকে একমনে চিরে যাচ্ছে বোকা কাঠঠোকরা। প্রজাপতির নামে হুলিয়া জারি হয়েছে। মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়েও তাই বাতাসের সাথে যুদ্ধে নেমেছে। আমি একহাত দূরে বসে নামতা মুখস্থ করে যাচ্ছি অনর্গল---দুই একে দুই, দুই দুগুণে ছয়।

(দুই একে দুই, দুই দুগুণে ছয়
হিসাব মেলেনি তো?
বলবে দুই, দুই চার? কিনতু---
তুমি-আমি এক হলেই সংসার
দু’টো ফুটফুটে শিশু
এখনো বলবে দুই দুগুণে ছয় নয়?)


ভুল করিনি, ভুল আমার হয় না। নির্বাচনে কারচুপি না হলে আমলাতন্ত্র নিয়ে কথা বলা যেত। রাত নামলে কিছু তারা চিনিয়ে দেব। যেসব তারারা এক সময় সারারাত ঝগড়া করতো আজ ওরাও কেমন নিষ্প্রভ হয়ে আসছে। আসলে মনের মত মন না হলে বিবাদেও মন ভরে না।

তোমরা কি ভাবো আমার শরীরের এই কাঠামোর ভেতর নির্জিব কোনো প্রেত বসত করে? আমার তো মনে হয় এটা শ্মশ্বান ঘাট।


এখন লিপস্টিক বিষয়ক উপাখ্যান লিখতে বসিনি যে রক্ত আর রঙের ফারাক বুঝব না। আমার তো মনে হয় সবটাই চোরাবালি। ডুবে ডুবে জল খাওয়া আর লুকিয়ে চুমু খাওয়া খুব মিষ্টি। অনশন ভেঙ্গে জল খাওয়া যায় বৈ কি! চুমু খেলেই কেউ কেউ চোখ ঠেরে চায়, যেন এসবে কত্তো অপরাধ। ঠোঁট তো মাটির ঘড়া নয় যে ভেঙ্গে যাবে। ঠোঁট হলো অথৈ সাগর। অনশন ভাঙতে চাইলে এর চেয়ে মিষ্টি আর কি আছে, বলো!


এবারের বৈশাখীতে নাগরদোলায় চড়া হলো না, হয়নি গত ক’য়েকটি বছরও। বয়স বাড়ছে না কমছে এ নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে তেমনি সামনে আর কতগুলো জ্যৈষ্ঠি স্মৃতিময় বাহারী রঙ্গে উল্লসিত হবে এ নিয়েও কম দ্বিধা নেই। চলন্ত ট্রেনের পেছনের সিটে বসে চলে যাচ্ছে সময়। আয়নায় শোকগাঁথা লিখে রাখছি। আজ থেকে পাঁচবছর আগেও এত কুঞ্চন পড়েনি ত্বকে। ঠিক এইমূহুর্তেও যেমন ঝরে গেল ত্বকের আরেকটি কোষ। পাঁচবছর পর হয়তো আবার টের পাব এই দিনে কেমন করে তার মৃত্যু হয়েছিল। আজকের দিনের জন্যে এটিই ছিল সর্বশেষ শোক সংবাদ।


একটা মানচিত্র এঁকে দেবে? এতে থাকবে লোনা জল, সতেজ চা-গাছ আর কিছু জ্যামিতিক বিন্যাস। এই ধরো ত্রিভূজ, বৃত্ত আরো কি সব। একটা বন্য শুকরও দিতে চাও? দাও তো! কিছুই ফেলে দেব না। ভয়াবহ কিছু চিত্র ছাড়া একটা দ্বীপ পরিপূর্ণ হয় না। এসো তবে দ্বীপ বিষয়ে ভাবতে বসি। কথা ছিল এখানে শুধুই আমাদের বসবাস হবে---তুমি আর আমি। সমুদ্রের নীচ থেকে পম্পেইয়ের ধ্বংসাবশেষ উঠে আসলে আমরাও হিসাব দিয়ে দেব কতটা পেয়েছি বা পাইনি। পরিপূর্ন মানচিত্রে কেবল দু’টো পুতুল এঁকে দিও বেশ আয়েশে। তাহলে হিসাব হবে বরাবর।